* উৎপাদনে যেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক মাস * গত বছরে পাঁচ দফায় রাশিয়া থেকে জ্বালানির প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছায়।
সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাচ্ছে না। যদিও চলতি ডিসেম্বরেই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যেতে পারছে না। বরং সব প্রস্তুতি শেষ করে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে আরো ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানা যায়। অথছ বছরখানেক আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিসহ মূল অবকাঠামোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। আর গত বছরে পাঁচ দফায় রাশিয়া থেকে জ্বালানির (ইউরেনিয়াম) প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছায়। কিন্তু গ্রিড লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চে প্রথম ইউনিটের গ্রিড লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর উৎপাদনে যেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক মাস। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাজেটের তৃতীয় প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দু’টি ইউনিট রয়েছে। প্রথম ইউনিটটি চালুর লক্ষ্যে রূপপুর-গোপালগঞ্জ রুটে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রিড লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ। যার মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার পদ্মা নদীতে পড়েছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে নদীর দু’পাশে স্থলভাগে লাইনের প্রায় ৯৬ শতাংশের কাজ। বাকি অংশের কাজ আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ সঞ্চালন লাইনের নদী অংশের কাজ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী অংশে এখনো প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ বাকি। তীব্র স্রোত ও পলিমাটির কারণে কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। পদ্মার ওপর দিয়ে গ্রিড লাইন নেয়ার জন্য মূলত চারটি টাওয়ার নির্মাণ হচ্ছে। এরমধ্যে দু’টি নির্মাণ হচ্ছে দুই তীরে আর বাকি দু’টো নদীর মাঝে। সার্বিকভাবে নদীর দু’পাশের তীরের টাওয়ারের পাইলিংয়ের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর নদীর ভেতরে দুই টাওয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫০ শতাংশ। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরো অন্তত চার মাস সময় লাগতে পারে। সূত্র জানায়, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত, সিঙ্গাপুর, তুরস্কসহ অন্য দেশের যেসব নাগরিকরা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মূল কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, নিরাপত্তা শঙ্কায় তারা সকলে নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। এজন্য তিন মাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল গ্রিড লাইনের নির্মাণকাজ। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আর নিরাপত্তা ইস্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অক্টোবরের শেষের দিকে তারা আবারও কাজে যোগ দিয়েছে। টানা তিন মাস কোনো কাজ না হওয়ায় সঞ্চালন লাইনের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রিড লাইন পুরোপুরি রেডি করা সম্ভব হয়নি। এদিকে এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রশিদ খান জানান, প্রথম ছয় মাসে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলনের কারণে সারা দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেজন্য সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজে ধীরগতি দেখা দেয়। আর ৫ অগাস্টের পর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়া প্রসঙ্গে রূপপুর এনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান জানান, গ্রিড লাইন রেডি হওয়ার পর উৎপাদনে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে। সব ধরনের প্রস্তুি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়া হয়। তাছাড়া প্রাথমিক বিভিন্ন পরীক্ষা শেষ করে জ্বালানি লোড করতে দুই মাসের মত সময় প্রয়োজন হবে। এরপর পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে আরো এক মাস। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে গ্রিড রেডি হলে থার্ড কোয়ার্টারে অর্থাৎ আগস্টে হয়তো টেস্ট ট্রায়ালে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রথম ইউনিট চালুর এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৬ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি চালু করা সম্ভব হবে।

চালু করা যাচ্ছে না রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র
- আপলোড সময় : ১৫-১২-২০২৪ ১১:৪১:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-১২-২০২৪ ১১:৪১:০৫ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ